মাছ/চিংড়ি চাষে প্ল্যাঙ্কটনের প্রভাবঃ মাছ/চিংড়ি চাষ করতে গেলে পুকুরের পানির উপর কয়েক ধরণের স্তর সৃষ্টি হয়, এই স্তর সৃষ্টি হলে পুকুরে মাছের উৎপাদন ব্যহত হয়। সাধারণত তিন ধরণের সর/স্তর দেখা যায়।

১। ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তর
২। ইউগ্লেনাজনিত স্তর
৩। আয়রণজনিত স্তর

ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তর

ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তরের কারণঃ

  • সাধারণত এটি অতিরিক্ত খাদ্য বা সার প্রয়োগের কারণে
  • খাদ্যে অতিরিক্ত আমিষ, ফসফরাস থাকলে

ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তরের প্রভাবঃ

  • রাতের বেলায় পানিতে অক্সিজেন কমে যায়
  • অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ভোর রাতে মাছ পানির উপর ভেসে ওঠে
  • দিনের বেলায় পিএইচ মান বেড়ে যায়
  • বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে মাছ মারা যায়

ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তরের প্রতিকারঃ

  • তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুকুরে পানি সরবরাহ করা
  • প্রতি শতকে ১০-১৫ গ্রাম র‍্যাপিডঅক্স প্রয়োগ
  • খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা
  • প্রতি শতকে ১৫গ্রাম (৩-৫ ফুট গভীরতায়) তুঁতে পাতলা কাপড়ে ছোট ছোট পটলায় বেধে পানি পৃষ্ঠের ১/২ ফুট নিচে খুঁটির মধ্যমে বেধে দিতে হবে।
  • তুঁতে প্রয়োগের ২ দিন পর পুকুরে ১০০ গ্রাম/শতক হারে টার্মিনেটর ও ৫ মিলি/শতক হারে ফিক্সজি প্রয়োগ করতে হবে।
  • টার্মিনেটর ও ফিক্সজি প্রয়োগের ১/২ দিন পর ব্যাকফিক্স ১ গ্রাম/শতক হারে প্রয়োগ করতে হবে।

ইউগ্লেনাজনিত স্তরঃ

এই ধরনের সর দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে লালচে- বাদামী বর্ণ ধারণ করে কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে বা সন্ধ্যায় আলো মিলিয়ে যেতে না যেতেই সবুজ বর্ণ ধারন করে; এটার মধ্যে হাত কিংবা কোন কাঠ ঢুকিয়ে দিলে সরে যায় আবার হাত বা কাঠ বের করে নিলে সাথে সাথেই মুদে যায়।

ইউগ্লেনাজনিত স্তরের কারণঃ ইউগ্নেনা নামক বহু কোষী প্রাণীর উপস্থিতি; যেটিতে ক্লোরোফিল নামক উপাদান থাকায় সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে ভিন্ন বর্ণ (দিনে খয়েরি/লালচে কালো বা বাদামী; বিকেলে বা সন্ধ্যায় সবুজ) ধারণ করে থাকে।

ইউগ্নেনাজনিত স্তরের প্রতিকারঃ ইউগ্লেনা হলে স্তরটি একপাশে চাপিয়ে বা বাতাসে এক পাশে চলে গেলে আসলে ৩ দিন অন্তর-অন্তর তুলে ফেলতে হবে। এইভাবে ৩-৪ বার প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি ১৫ দিন পর পর ব্যাকফিক্স ১ গ্রাম/শতক হারে প্রয়োগ করতে হবে।

আয়রন জনিত স্তরঃ

এটি সব সময়ই লালচে বাদামী; এটির বর্ণ কখনই পাল্টায় না।

আয়রন জনিত স্তরের কারণঃ পানিতে আয়রনের পারিমান বেশি থাকা বা আয়রন সম্বলিত ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ।

আয়রন জনিত স্তরের প্রতিকারঃ

১। বোরিং এর গভীরতা আয়রন মুক্ত স্তরে স্থাপন করতে হবে
২। সম্ভব না হলে ঘাস সম্বলিত নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত করে একটি পুকুরে ফেলে তারপর মুল পুকুরে সরবরাহ করতে হবে
৩। বাঁশ বা ঘাসের দড়ি দিয়ে চাপিয়ে নিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে
৪। পুকুরে প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম Stabilizer এবং ১ গ্রাম/শতক হারে ব্যাকফিক্স প্রয়োগ করতে হবে।

সর্বোপরি, যেসব কারণে পকুরে ফাইটোপ্লাংটন প্রাচুর্যজনিত স্তর, ইউগ্লেনাজনিত স্তর, আয়রন জনিত স্তর হবার অন্যতম প্রধান কারণ পুকুরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য সার প্রয়োগ।

মাচ/চিংড়ির সঠিক গ্রোথের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এজন্য পুকুরে ১০০-১৪০ গ্রাম/শতক হারে আলট্রামিন প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে পুকুরে উপকারি প্ল্যাঙ্কটন বাড়বে কিন্তু ক্ষতিকর প্ল্যাঙ্কটন বাড়বে না।