হাইব্রিড ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু ও মাটিঃ দীর্ঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং প্রচুর সূর্যালোক থাকে এমন এলাকা ঝিঙ্গা চাষের জন্য উত্তম। সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি ঝিঙ্গার সফল চাষের জন্য উত্তম।
বীজ বপনের সময়ঃ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যেকোন সময় ঝিঙ্গার বীজ চাষ করা যেতে পারে। তবে সারাবছরই ঝিঙ্গার চাষ করা যায়।
বীজের হারঃ একর প্রতি বীজ বপণের হার ২০০-২৫০ গ্রাম।
হাইব্রিড ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি
বেড তৈরিঃ বেডের উচ্চতা ১৫-২০ সেমি, প্রস্থ ১.২ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামত নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ ও নিকাশ নালা এবং ফসল পরিচর্যার সুবিদার্থে প্রতি দুবেড পরপর ৩০ সেমি প্রসস্থ নালা থাকবে।
মাদা তৈরি ও চারা রোপণঃ মাদার ব্যাস ৫০ সেমি, গভীরতা ৫০ এবং তলদেশ ৫০ সেমি হবে। ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন উভয় বেডের কিনারা হইতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা লাগাতে হবে। চারাগুলো লাগানোর আগের দিন বিকালে পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। পরের দিন বিকালে চারা রোপণ করতে হবে।
মাদার মাটি ভালোভাবে উলট পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশ মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
বাউনি দেওয়াঃ ঝিঙ্গার কাঙ্খিত ফলন পেতে অবশ্যই মাচায় চাষ করতে হবে। ঝিঙ্গা মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয় এজন্য ফলনও কমে যায়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (শতাংশ প্রতি)ঃ
![](https://i0.wp.com/babylonagrodairy.com/wp-content/uploads/2021/10/ঝিঙ্গাতে-সারের-পরিমাণ-.webp?resize=1080%2C472)
ঝিঙ্গার রোগ ও পোকা এবং এর সমাধানঃ
ঝিঙ্গার পাতা ছিদ্রকারী পোকাঃ
ক্ষুদ্র কীড়া পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। তাই পাতার উপর ছিদ্র হয় এবং পাতার খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।
![ঝিঙ্গার পাতা ছিদ্রকারী পোকা](https://i0.wp.com/babylonagrodairy.com/wp-content/uploads/2021/10/ঝিঙ্গার-পাতা-ছিদ্রকারী-পোকা-2.webp?resize=481%2C271)
চিচিঙ্গার পাতা ছিদ্রকারী পোকা দমনে ব্যবহার করুন লরেন্ট ৫এসজি (স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশযোগ্য স্পর্শক ও পাকস্থলীক্রিয়া গুণসম্পন্ন প্রবাহমান কীটনাশক)। এর প্রতি কেজিতে ৫০ গ্রাম এমামেকটিন বেনজয়েট বিদ্যমান। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ১০ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ২০০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ৫০০ গ্রাম।
প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলের ভিতরে থাকা পোকা মারা যায়। স্পর্শক গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার গায়ে লাগা মাত্রই পোকা মারা যায়। স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশযোগ্য ও পাকস্থলীক্রিয়া গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার স্নায়ুতন্ত্রের “কোলিন এস্টারেজ” এনজাইমের কার্যকারিতাকে বাঁধাগ্রস্ত করে পোকাকে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং পরবর্তীতে পোকা মারা যায় I লরেন্ট স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে ব্যবহার করা উত্তম।
চিচিঙ্গার ফলের মাছি পোকাঃ
![আক্রান্ত গাছ](https://i0.wp.com/babylonagrodairy.com/wp-content/uploads/2021/10/আক্রান্ত-গাছ-.webp?resize=472%2C213)
স্ত্রী মাছি কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মত তরল পদার্থ বেড়িয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামী রং ধারন করে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাস খেতে শুরু করে এবং ফল বিকৃত হয়ে যায় এবং হলুদ হয়ে পঁচে ঝড়ে যায়।
চিচিঙ্গার ফলের মাছি পোকা দমনে ব্যবহার করুন টোপাম্যাক ৭০ ডব্লিউ জি (প্রতি কেজিতে ৭০০ গ্রাম ইমিডাক্লোপ্রিড)। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ২ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ৪০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ১০০ গ্রাম। প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলের ভিতরে থাকা পোকা মারা যায়। টোপাম্যাক স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে ব্যবহার করা উত্তম।
চিচিঙ্গার ডাউনি মিলডীউঃ
বয়স্ক পাতায় এ রোগ প্রথম দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামী রঙের তালির মত দাগ দেখা যায়। এদাগ ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
![চিচিঙ্গার ডাউনি মিলডীউ](https://i0.wp.com/babylonagrodairy.com/wp-content/uploads/2021/10/চিচিঙ্গার-ডাউনি-মিলডীউ.webp?resize=487%2C257)
ডাউনি মিলডীউ দমনে অত্যন্ত কার্যকরী ছত্রাকনাশক হলো ট্রয় ৬৩.৫ এসসি (প্রতি লিটারে এজোক্সিস্ট্রবিন ১১০ গ্রাম + সিপ্রোকোনাজল ৪০ গ্রাম + টেবুকোনাজল ১২৫ গ্রাম বিদ্যমান)। ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ১০ মিলি, একর প্রতি ২০০ মিলি, হেক্টর প্রতি মাত্রা ৫০০ মিলি।
প্রতিরোধক গুণসম্পন্ন হওয়ায় রোগ আসার আগে ব্যবহার করলে ফসলে রোগের আক্রমণ হয়না। প্রতিষেধক গুণসম্পন্ন হওয়ায় রোগ আসার পরে ব্যবহার করলেও ফসলে রোগের আক্রমণ বাড়তে দেয়না।
অধিক ফলন পেতে স্প্রে করুন “ফসলি গোল্ড”। ২০ মিলি ফসলি গোল্ড ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
![ফসলি গোল্ড](https://i0.wp.com/babylonagrodairy.com/wp-content/uploads/2021/10/ফসলি-গোল্ড-1.webp?resize=490%2C281)