হাইব্রিড ঢেঁড়সের চাষ পদ্ধতি-

জলবায়ু ও মাটিঃ

ঢেঁড়সের জন্য অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন। শুষ্ক ও আর্দ্র উভয় অবস্থায় ঢেঁড়স জন্মানো যায়। সাধারণত খরিপ মৌসুমেই এর চাষ হয়ে থাকে। দোআঁশ মাটি ঢেঁড়সের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করতে পারলে যেকোন ধরণের মাটিতেও এর চাষ করা যায়। মাটি সুনিষ্কাশিত হওয়া প্রয়োজন।

হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জাত ভেদে বীজ বপনের সময় নিম্নরুপ

  • রাজা : তীব্রশীত ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়
  • বেবী : তীব্রশীত ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়
  • সৌমি : মে থেকে আগষ্ট এবং নভেম্বর থেকে মার্চ
  • সৌমি গ্রীণ : তীব্রশীত ব্যতীত সারা বছর চাষ করা যায়
  • কচি : অক্টোবর থেকে এপ্রিল

বীজের হারঃ প্রতি একরে ২ কেজি।

জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ উচু জমি নির্বাচন করে ৫/৬ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। মাঠে সরাসরি বীজ বপনের জন্য ১ মিটার প্রস্থ বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি প্রস্থ নালা রাখতে হবে। বেড সাধারণত ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে।

বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ৪৫ সেমি এবং প্রতি সারিতে ৩০ সেমি পর পর বীজ বপন করা হয়। ২-৩ সেমি গভীরে প্রতি গর্তে ২ টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিটা তুুলে ফেলতে হবে। বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় সেচ্ আবশ্যক।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগের নিয়মঃ

ঢেঁড়সে সারের পরিমাণ

অন্যান্য পরিচর্যাঃ সময়মত নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ্ দিতে হবে।

ঢেঁড়সের রোগ ও পোকা এবং এর সমাধানঃ

ঢেঁড়সের নানা ধরণের রোগ ও পোকা এবং এর সমাধান নিম্নে দেয়া হল-

হলুদ শিরা মোজাইক ভাইরাসঃ

 হলুদ শিরা মোজাইক ভাইরাস
হলুদ শিরা মোজাইক ভাইরাস আক্রান্ত চারা গাছের পাতা এবং এর বাহক পোকা-

ঢেঁড়স গাছ বাহক পোকার মাধ্যমে ভাইরাস আক্রান্ত হয়। তাই বাহক পোকা দমন-ই ভাইরাস ঠেকানোর একমাত্র উপায়।

টোপাম্যাক রস শোষণকারী পোকা ভাইরাস এর বাহক পোকা দমনে অত্যন্ত কার্যকর। টোপাম্যাক ৭০ ডব্লিউ জি (প্রতি কেজিতে ৭০০ গ্রাম ইমিডাক্লোপ্রিড বিদ্যমান) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ২ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ৪০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ১০০ গ্রাম।

প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলের ভিতরে থাকা পোকা মারা যায়। টোপাম্যাক স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে ব্যবহার করা উত্তম।

টোপাম্যাক

চারা গাছে কাটুই পোকার আক্রমণঃ

কাটুই পোকার আক্রমণ

কাটুই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে- “সাইকন”। সাইকন ৫৫ ইসি (প্রতি কেজিতে ৫০০ গ্রাম ক্লোরপাইরিফস ও ৫০ গ্রাম সাইপারমেথ্রিন বিদ্যমান) ৫ শতক জমির জন্য ১০ লিটার পানিতে ২০ মিলি, প্রতি একরে ৪০০ মিলি এবং প্রতি হেক্টরে ১ লিটার। পাকস্থলীক্রিয়া গুণসম্পন্ন হওয়ায় গাছের ভিতরে থাকা পোকা রস শোষণের ফলে মারা যায়।

স্পর্শক গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার গায়ে লাগা মাত্রই পোকা মারা যায়। শ্বাসরোধ ক্রিয়া গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকারক পোকার শ্বাসরোধ করে পোকাকে মেরে ফেলে। সাইকন স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে স্প্রে করা উত্তম।

ঢেঁড়স এর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ

ঢেঁড়স এর ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে ব্যবহার করুন লরেন্ট ৫এসজি (প্রতি কেজিতে ৫০ গ্রাম এমামেকটিন বেনজয়েট); প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ১০ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ২০০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ৫০০ গ্রাম। প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলের ভিতরে থাকা পোকা মারা যায়।

ঢেঁড়স এর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা

স্পর্শক গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার গায়ে লাগা মাত্রই পোকা মারা যায়। স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশযোগ্য ও পাকস্থলীক্রিয়া গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার স্নায়ুতন্ত্রের “কোলিন এস্টারেজ” এনজাইমের কার্যকারিতাকে বাঁধাগ্রস্ত করে পোকাকে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং পরবর্তীতে পোকা মারা যায় I লরেন্ট স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে ব্যবহার করা উত্তম।

চারা গাছের ঢলে পড়া / গোড়া পচা রোগঃ

চারা গাছের ঢলে পড়া

চারা গাছের ঢলে পড়া / গোড়া পচা রোগ দমনে ব্যবহার করুন প্রোকার্ব (প্রতি কেজিতে ৭২০ গ্রাম প্রোপামোকার্ব বিদ্যমান)। মাটির উপরের অংশ এবং গোড়া সহ সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ১০ মিলি, একর প্রতি ২০০ মিলি, হেক্টর প্রতি মাত্রা ৫০০ মিলি।

প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলে দ্রুত রোগের আক্রমণ থেমে যায়। প্রতিরোধক গুণসম্পন্ন হওয়ায় রোগ আসার আগে ব্যবহার করলে ফসলে রোগের আক্রমণ হয়না। প্রতিষেধক গুণসম্পন্ন হওয়ায় রোগ আসার পরে ব্যবহার করলেও ফসলে রোগের আক্রমণ বাড়তে দেয়না।

আবহাওয়া ও রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে ৭-১৪ দিন পরপর গাছ ভিজিয়ে বাতাসের অনুকূলে প্রোকার্ব স্প্রে করুন। চারাগাছের যেকোনো রোগের অপ্রতিদ্বন্দী ভাবে কাজ করে। প্রোকার্ব স্প্রে করার ৭-১০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকালে ব্যবহার করা উত্তম।

অধিক ফলন পেতে স্প্রে করুন “ফসলি গোল্ড” ২০ মিলি ফসলি গোল্ড ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

ফসলি গোল্ড