হাইব্রিড চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি

জলবায়ু ও মাটিঃ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চিচিঙ্গা ভালো জন্মে। বীজের অংকুরোদগম ও গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন। যেমন, দিনের বেলায় ২৫-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়াতেও ভালো জন্মে।

চিচিঙ্গা চাষের জন্য যেমন অধিক পানির প্রয়োজন হয়, অন্য দিকে এটি আবার জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে এর পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি চিচিঙ্গা চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।

বীজ বপনের সময়ঃ শীতের দু’তিন মাস বাদ দিলে বাংলাদেশে বছরের যেকোনো সময় চিচিঙ্গা চাষ করা যায়। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চিচিঙ্গার চাষ করলে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়। তবে শীতকালে চাষ করলে গাছের বৃদ্ধি কম হওয়ায় ফলনও একটু কম হয়।

বীজের হারঃ একর প্রতি বীজ বপণের হার ১-১.৫ কেজি।

জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন ঢিলা বা আগাছা না থাকে। চিচিঙ্গা গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরুপে মাদা তৈরি করতে হবে।

বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ

  • জমি বড় হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে লম্বায় কয়েক ভাগে ভাগ কর নিতে হয়।
  • বেডের প্রস্থ হবে ১.০ মিটার এবং দু-বেডের মাঝে ৩০ সেমি নালা থাকবে।
  • চিচিঙ্গার বীজ সরাসরি মাদায় বোনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন করতে হবে।
  • তাছাড়া পলিব্যাগে (১০x১২ সেমি) ১৫-২০ দিন বয়সের চারা উৎপাদন করে নেওয়া যেতে পারে।
  • চিচিঙ্গার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে।
  • চারা গজানোর পর একের অধিক গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে।
  • বীজের ত্বক শক্ত ও পুরু বিধায় বোনার পূর্বে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে বীজ তাড়াতাড়ি অঙ্কুরিত হয়।
  • মাদায় বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত ১০ দিন আগে মাদায় নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরি করে নিতে হবে। মাদার আয়তন হবে ৪০x৪০x৪০ সেমি।

বাউনি দেওয়াঃ চিচিঙ্গার কাঙ্খিত ফলন পেতে অবশ্যই মাচায় চাষ করতে হবে। চিচিঙ্গা মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয় এজন্য ফলনও কমে যায়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (শতাংশ প্রতি) ঃ

হাইব্রিড চিচিঙ্গার চাষ পদ্ধতি

অন্যান্য পরিচর্যাঃ সময়মত নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ্ দিতে হবে ।

চিচিঙ্গার রোগ ও পোকা এবং এর সমাধানঃ

চারাগাছে কাটুই পোকার আক্রমণঃ

চারাগাছে কাটুই পোকার আক্রমণ

কাটুই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে- “সাইকন” ১০ লি: পানিতে ২০ মিলি “ সাইকন ” মিশিয়ে বিকেল বেলা স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকাঃ এই পোকা পাতার উপর বসে রস চুষে খেয়ে পাতার উপর থেকে নিচ বরাবর সুড়ঙ্গ করে ফেলে। এর ফলে পুরো পাতাই আঁকাবাঁকা দাগের মত দেখায় এবং পরিশেষে পাতাটি মারা যায়।

পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা

পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার করুন টোপাম্যাক ৭০ ডব্লিউ জি। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ২ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ৪০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ১০০ গ্রাম। প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলের ভিতরে থাকা পোকা মারা যায়। টোপাম্যাক স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে ব্যবহার করা উত্তম।

চিচিঙ্গার ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ চিচিঙ্গার ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে ব্যবহার করুন লরেন্ট (স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশযোগ্য স্পর্শক ও পাকস্থলীক্রিয়া গুণসম্পন্ন প্রবাহমান কীটনাশক)। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ১০ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ২০০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ৫০০ গ্রাম। প্রবাহমান গুণসম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত গাছের ভিতরে প্রবেশ করে ফলে আক্রান্ত ফসলের ভিতরে থাকা পোকা মারা যায়। স্পর্শক গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার গায়ে লাগা মাত্রই পোকা মারা যায়। স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশযোগ্য ও পাকস্থলীক্রিয়া গুণসম্পন্ন হওয়ায় ইহা পোকার স্নায়ুতন্ত্রের “কোলিন এস্টারেজ” এনজাইমের কার্যকারিতাকে বাঁধাগ্রস্ত করে পোকাকে প্যারালাইজড করে ফেলে এবং পরবর্তীতে পোকা মারা যায় I লরেন্ট স্প্রে করার ১৪ দিনের মধ্যে ফসল খাওয়া যাবেনা। সকল ধরণের বালাইনাশক বিকেলে ব্যবহার করা উত্তম।

চিচিঙ্গার ফল ছিদ্রকারী পোকা

পাতা কোকড়ানো রোগঃ এ রোগ হলে পাতা কুঁকড়ে যায় এবং পাতা ছোট হয়ে যায়। পাতা হলদে হয়ে যায়, বয়স্ক পাতা শক্ত ও মচমচে হয় এবং গাছ খাটো হয়ে যায়। বাহক পোকার মাধ্যমে চিচিঙ্গার পাতা কোকড়ানো রোগ হয়। তাই বাহক পোকা দমন-ই ভাইরাস ঠেকানোর একমাত্র উপায়।

চিচিঙ্গার পাতা কোকড়ানো

বাহক পোকা দমনে ব্যবহার করুন টোপাম্যাক ৭০ ডব্লিউ জি। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ২ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ৪০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ১০০ গ্রাম।

হোয়াইট মোল্ডঃ এ রোগের আক্রমনে কান্ড ও ফলে সাদা তুলার মত দাগ দেখা যায় এবং ওখান থেকে ফলটি পচে যায়। হোয়াইট মোল্ড দমনে ট্রয় অত্যন্ত কার্যকরী ছত্রাকনাশক।

হোয়াইট মোল্ড

অধিক ফলন পেতে স্প্রে করুন “ফসলি গোল্ড” ২০ মিলি ফসলি গোল্ড ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

হাইব্রিড চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি