ভূট্টা চাষ পদ্ধতিঃ
ভূট্টা ফসল সারাবছর চাষ করা যায, তবে রবি মৌসুমে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। ভূট্টা চাষবাদে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নিম্নে বর্ণিত হলো-
জমি নির্বাচন, তৈরী ও বীজ বপন পদ্ধতিঃ
সাধারণত পানি জমে থাকেনা এমন বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। জো থাকা অবস্থায় মাটির প্রকারভেদে ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ দিতে হবে। ৮-১০ ইঞ্চি গভীর করে চাষ দেয়া ভাল। চাষের পর মই দিয়ে মাটি সমতল করা প্রয়োজন। সারি টেনে বীজ বোনা উত্তম।
- সারি থেকে সারির দূরত্বঃ ৫৫-৬০ সেমি (২২-২৪ ইঞ্চি)
- বীজ থেকে বীজের দূরত্বঃ ২২.৫-২৫ সেমি (৯-১০ ইঞ্চি)
- বপনের গভীরতাঃ ৩-৫ সেমি (প্রায় দেড় ইঞ্চি)
- প্রতি গর্তে বীজের সংখ্যাঃ ১টি
বপনের সময়ঃ অক্টোবর থেকে জানুয়ারি।
ভুট্টার কয়েকটি উন্নত হাইব্রিড জাতঃ
সার প্রয়োগঃ
ভুট্টা সার-প্রিয় ফসল। ভুট্টা চাষে সাফল্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সার দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। জমির উর্বরতাভেদে সারের মাত্রার কিছুটা তারতম্য হতে পারে। নিচের ছকে সারের মাত্রা দেয়া হলঃ
একর প্রতি সারের পরিমাণ ও প্রয়োগের নিয়মঃ
- ভুট্টা গাছের সুষ্ঠ পরগায়নে এবং পরগায়িত ভুট্টার মোচায় সঠিকভাবে দানা গঠনের জন্য গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে ভাল মানের বোরণ স্প্রে করতে হবে।
- উপরিপ্রয়োগের সময় মাটিতে পরিমিত রস থকা দরকার, না থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
জলাবদ্ধতা ভুট্টার জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভুট্টার জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। জলবায়ু, জমির পানি ধারণ ক্ষমতা, শিকড়ের গভীরতা ইত্যাদির উপর সেচ ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে। তবে পানির অভাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে গাছের সংবেদনশীল বৃদ্ধি পর্যায়সমূহের ভিত্তিতে সেচ প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। রবি মৌসুমে ভুট্টার ভাল ফলন পেতে হলে জমি ও মাটির প্রকারভেদে ৪/৫ বার সেচ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
- প্রথম সেচঃ বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে (৪-৬ পাতা পর্যায়)
- দ্বিতীয় সেচঃ বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে (৮-১২ পাতা পর্যায়)
- তৃতীয় সেচঃ বীজ বপনের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে (মাথার ফুল আসা পর্যায়)
- চতুর্থ সেচঃ বীজ বপনের ১০০-১০৫ দিনের মধ্যে (মোচা নরম দুধ অবস্থা পর্যায়)
- পঞ্চম সেচঃ বীজ বপনের ১১৫-১২০ দিনের মধ্যে (মোচা দানা শক্ত হওয়া পর্যায়)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ গাছে ফুল আসার পর খেয়াল রাখতে হবে, যেন পরবর্তী ৩০-৩৫ দিন জমিতে কখনো রসের ঘাটতি না হয়।
পোকা-মাকড় দমনঃ
কাটুঁই পোকা, মাজরা পোকা এবং ফল আর্মিওয়ার্ম দমনের জন্য অনুমোদিত বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ-বালাই দমনঃ
ভুট্টা ফসলে খুব একটা রোগ বালাই দেখা যায় না, তবে প্রয়োজনে অনুমোদিত মাত্রায় সঠিক বালাইনাশক (ব্যাকটেরিয়ানাশক) সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও উৎপাদন ক্ষমতাঃ
সম্পূর্ণ পরিপক্ক (উপরে ২-৩ পাতা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট পাতা সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে) হওয়ার পর ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
বিশেষ নির্দেশনাঃ
মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা গেলে নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে মোচা পেকেছে। পাকা মোচাগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। অতি বৃষ্টির সময় গাছ থেকে মোচা সময়মত সংগ্রহ করতে না পারলে চাপ দিয়ে গাছ আলতোভাবে নুয়ে মোচাগুলো মাটির দিকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এতে মোচার ভিতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে দানাগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
পরে মেঘমুক্ত দিনে গাছ থেকে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। মোচা সংগ্রহের সময় মোচাগুলোর খোসা ছাড়িয়ে নেয়া ভাল। সংগৃহীত মোচা রোদে ৩-৪ দিন খুব ভাল করে শুকিয়ে মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে বা হাত দিয়ে দানা খসাতে হবে। দানা আলাদা করে আবার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
Welcome
ভালো বীজ কোথায় পাওয়া যায়।