হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু ও মাটিঃ মিষ্টি কুমড়ার জন্য শুষ্ক ও উঞ্চ জলবায়ু প্রয়োজন। প্রায় ১৬০-১৭০ দিনের মতো উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নিম্ন আদ্রতা উত্তম। মিষ্ট কুমড়ার ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল তাপমাত্রা হলো ২০০-২৫০ সেলসিয়াস। বীজের অংকুরোদগমের জন্য অনুকুল তাপমাত্রা হলো ২১০-৩২০ সেলসিয়াস।
চাষকালীন সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায় যার ফলে ফলন কমে যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয়।
বীজ বপনের সময়ঃ শীতকালে চাষের জন্য আগষ্ট-ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালে চাষের জন্য ফেব্রæয়ারি-মে মাসে বীজ বপন করা যায়। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়াতে নিয়মিত পরিচর্যায় সারা বছরই মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে কাংখিত ফলন পাওয়া যায়।
বীজের হারঃ প্রতি একরে ০.৩-০.৫ কেজি।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
জমিতে প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন ঢিলা বা আগাছা না থাকে।
মিষ্টিকুমড়া গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরুপে মাদা তৈরি করতে হবে।
বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ভাল হয়।
ভালো ফলরের জন্য বীজ মাদা তৈরী করে রোপন করতে হয়।
মাদার আকারঃ ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীরতা ৫০-৫৫সেমি এবং তলদেশের ব্যাস ৪০-৪৫। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ২ মিটার এবং প্রতি সারিতে ২ মিটার পর পর বীজ বপন করা হয়। ২-৩ সেমি গভীরে প্রতি মাদায় ২ টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিটা তুুলে ফেলতে হবে। বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় সেচ্ আবশ্যক।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
সেচঃ সমস্ত জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেওয়া যাবেনা। সেচ নালা থেকে অল্প করে পানি নিয়ে শুধু মাত্র গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া ফসলে ৫-৭ দিন অন্তর অন্তর সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
মালচিংঃ সেচের পর জমিতে চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যহত হয়। কাজেই প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
আগাছা দমনঃ চারা লাগানোর পর থেকে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় নিড়ানী দিয়ে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষন করে নেয় বলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।ঃ চারা লাগানোর পর থেকে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় নিড়ানী দিয়ে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষন করে নেয় বলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।
মিষ্টি কুমড়ার রোগ ও পোকা এবং এর সমাধানঃ
রেড পামকিন বিটল
ক্ষতির ধরণঃ এরা পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। এই পোকা বয়স্ক গাছের পাতার শিরা উপশিরা রেখে সম্পূর্ণ সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে।
মিষ্টি কুমড়ার রেড পামকিন বিটল দমনে ব্যবহার করুন ইথ্রিন। প্রয়োগ মাত্রাঃ ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি।
ডগা ছিদ্রকারী পোকা ক্ষতির ধরণঃ প্রথমে এরা গাছের ডগার উপর ছোট একটা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে যায় এবং পরবর্তীতে সম্পূণ ডগাটি খেয়ে ফেলে।
মিষ্টি কুমড়ার ডগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে ব্যবহার করুন লরেন্ট। প্রয়োগ মাত্রাঃ ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম।
মিষ্টি কুমড়ার পাউডারি মিলডিউ লক্ষণঃ পাতার উপরের দিকে সাদা রঙের পাউডারের মতো দাগের সৃষ্টি হয় এবং পরে দাগ গুলো বড় হয়ে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পরে। এ রোগের কারণে ফলের গুনগত মান কমে যায় এবং ফলন কমে যায়।
পাউডারি মিলডিউ রোগের প্রতিকারঃ প্রোকার্ব ৭২০ এস এল ১০ লিটার পানিতে ১০ মি.লি. এবং সেস্জিম ৫০ ডবিøউ পি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম।
অধিক ফলন পেতে স্প্রে করুন “ফসলি গোল্ড”। ২০ মিলি ফসলি গোল্ড ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।