হাইব্রিড লাউ চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু ও মাটিঃ
বেশি শীত ও না আবার বেশি গরমও না এমন আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য উত্তম। বাংলাদেশের শীতকালটা লাউ চাষের জন্য বেশী উপযোগী। তবে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলের তাপমাত্রা শীতকালে কখনও কখনও ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে চলে যায় যা লাউ চাষের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরুপ। লাউয়ের ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল তাপমাত্রা হলো দিনের বেলায় ২৫-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মেঘলা আবহাওয়ায় লাউয়ের ফলন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি লাউ চাষের জন সর্বোৎকৃষ্ট।
বীজ বপনের সময়ঃ
লাউ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল আগষ্ট থেকে নভেম্বর এবং গ্রীষ্মকাল ফেব্রুয়ারী থেকে মে তবে সারা বছরই লাউ চাষ করা যায়।
বীজের হারঃ
প্রতি একরে ৮০০ গ্রাম – ১০০০ গ্রাম।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ
সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন ঢিলা বা আগাছা না থাকে। লাউ গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরুপে মাদা তৈরি করতে হবে।
বীজ বপনের পদ্ধতি ও দূরত্বঃ
বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। ভালো ফলনের জন্য বীজ মাদা তৈরী করে রোপন করতে হয়।
মাদার আকারঃ
ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীরতা ৫০-৫৫সেমি এবং তলদেশ ৪০-৪৫সেমি। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ২ মিটার এবং প্রতি সারিতে ২ মিটার পর পর বীজ বপন করা হয়।
২-৩ সেমি গভীরে প্রতি মাদায় ২ টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিটা তুুলে ফেলতে হবে। বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় সেচ্ আবশ্যক।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (শতাংশ প্রতি)
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
সেচঃ লাউ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফল ধারণ ব্যহত হয় এবং যেসব ফল ধরেছে সেগুলোও আস্তে আস্তে ঝরে যায়। লাউয়ের সমস্ত জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেওয়া যাবেনা। সেচ নালা থেকে অল্প করে পানি নিয়ে শুধু মাত্র গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৫-৭ দিন অন্তর অন্তর সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
মালচিংঃ
সেচের পর জমিতে চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাশ চলাচল ব্যহত হয়। কাজেই প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
আগাছা দমনঃ
চারা লাগানোর পর থেকে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময় নিড়ানী দিয়ে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষন করে নেয় বলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।
বাউনি দেওয়াঃ
লাউয়ের কাঙ্খিত ফলন পেতে অবশ্যই মাচায় লাই চাষ করতে হবে। লাউ মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয় এজন্য ফলন কমে যায়।
লাউয়ের রোগ ও পোকা এবং এর সমাধানঃ
অ্যাফিডঃ
পাতার রস চুষে খায় ফলে পাতাটি আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়। আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে গাছটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়। এরা ভাইরাস জনিতরোগ ছড়ায়।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
১০ লিটার পানিতে ২ গ্রাম টোপাম্যাক মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
লাউয়ের পাউডারি মিলডিউঃ
লক্ষণঃ
পাতার উপরের দিকে সাদা রঙের পাউডারের মতো দাগের সৃষ্টি হয় এবং পরে দাগ গুলো বড় হয়ে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পরে। এ রোগের কারণে ফলের গুনগত মান কমে যায় এবং ফলন কমে যায়।
পাউডারি মিলডিউ রোগের প্রতিকারঃ
প্রোকার্ব ৭২০ এস এল ১০ লিটার পানিতে ১০ মি.লি.
সেসজিম ৫০ ডব্লিউ পি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম।
অধিক ফলন পেতে স্প্রে করুন
“ফসলি গোল্ড”
২০ মিলি ফসলি গোল্ড ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
করলা গাছ ফল ধারার পর গাছ মরছে, কি